Skip to main content

শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতিতে সেজে উঠছেন আমতার শতাব্দীপ্রাচীন সরস্বতী

নিজস্ব প্রতিনিধি:সময়টা ১৯০৫।বাংলা সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রমে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন।অন্যদিকে,লর্ড কার্জনের একটি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে  হঠাৎই গর্জে উঠলো বাঙালি।ব্রিটিশ সরকারের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দিকে দিকে শুরু হল সংঘবদ্ধ লড়াই।স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ছাত্র-যুবদের মধ্যে সঞ্চার করলেন এই ক্ষোভের আগুন।কোথাও বিদেশী দ্রব্য বয়কট,কোথাও বা স্বদেশী দ্রব্যের প্রচলন।বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে সেই ক্ষোভের আঁচ এসে পড়ল সুপ্রাচীন বন্দর নগরী আমতার বুকে।মার্টিন রেল,পান্তুয়া,সতীপীঠ মেলাইচন্ডী মন্দির সমৃদ্ধ এই ঐতিহাসিক জনপদ মুহুর্তের মধ্যে যেন গর্জে উঠল।এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে প্রয়োজন সংঘবদ্ধ শক্তির।আর সেই ঐক্য গড়ে তুলতে গেলে প্রয়োজন সাংগঠনিক শক্তির।আমতার ছাত্র-যুবদের একছাতার তলায় আনতে বেছে নেওয়া জল মাতৃশক্তি তথা বাগদেবীর আরাধনাকে।প্রথম বছরই তথা ১৯০৫ সালে মহাধুমধাম সহকারে অষ্টম পরী সহ ডাকের সাজে সুসজ্জিতা হয়ে মৃন্ময়ী মায়ের মন্ডপে আগমন ঘটে।১৯০৫ সালের সেই প্রথম পুজোয় পৌরহিত্য করেন বঙ্কিম চক্রবর্তী।মাতৃ আরাধনা ও ভোগ প্রস্তুতির জন্য গড়ে উঠল মাটির ঘর।তারই সাথে সংহতি স্থাপনের উদ্দেশ্যে কিশোরীমোহন ঘোষ,কাশীনাথ সাউ,দেবেন চক্রবর্তী,কালী কুন্ডু,গৌর চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ তৎকালীন উদ্যোমী যুবকদের নিরলস প্রচেষ্টায় আমতার দক্ষিণ পাড়ায় গড়ে উঠল 'আমতা বাণী সংঘ'।দেবীর নামেই নবগঠিত সংগঠনের নামকরণ করা হল।১৯০৫ সালের পর থেকে প্রতিবছরই ধুমধামের সাথেই সারস্বত আরাধনায় মেতে উঠত আমতার এই প্রাচীন সরস্বতী পুজো।'আমতা বাণী সংঘ'-এর বর্তমান সাংস্কৃতিক সম্পাদক শিক্ষক সুমন্ত সাউ জানান,দক্ষিণপাড়ার মা যে স্থানে দেবী পূজিতা হতেন সেই স্থান সরস্বতীতলা হিসাবে জনমুখে পরিচিত লাভ করে।দেবীর আরাধনা উপলক্ষে এক সপ্তাহব্যাপী মেলা,যাত্রা,লেটোগান,তরজাগান,নাটক,নরণারায়ণ সেবাকে কেন্দ্র করে কার্যত আনন্দভূমিতে পরিণত হত আমতা বাণী সংঘ সংলগ্ন প্রাঙ্গণ।তিনি আরও বলেন,"১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ভয়াবহ বন্যায় মাটির মাতৃমন্দির ভেঙে পড়ায় স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় সেবছরই পাকা ঠাকুর দালান গড়ে উঠল।দেবীর বিভিন্ন মহিমার কথা আজও লোকমুখে প্রচারিত হয়।প্রথমে বেতাই গ্রামের কেদার মিস্ত্রী ও পরে থলিয়া গ্রামের জীবন মিস্ত্রী ও তারঁ উত্তরসূরিরা মৃন্ময়ী মূর্তি তৈরি করতেন। মা'কে যেমন সাজেই সাজানো হোক না কেন তিনি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ চিরাচরিত রূপেই প্রতিভাত হন বলে স্থানীয় মানুষ বিশ্বাস করেন।" দেবীর সাথে থাকেন ছয় পরী।ছয় পরী যথাক্রমে ভারতমাতা,বঙ্গমাতা,দুই বেলপরী,জয়া এবং বিজয়া।শতাব্দীপ্রাচীন দেবীকে বিসর্জন করা হত বাঁশের ডুলিতে করে।এই পুজোকে কেন্দ্র আমতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষের সাড়া ছিল অভূতপূর্ব।

১৯০৫ থেকে ২০২০———কেটে গেছে দীর্ঘ ১১৫ টি বছর।আসা যাওয়ার এই নিরন্তর খেলায় হারিয়ে গেছেন শতাব্দীপ্রাচীন এই পুজোর স্রষ্টাগণ।পূর্বের মাটির ঘরের পরিবর্তে মা আজ পূজিতা হন পাথর বসানো পাকা দালানে,আজ মা বাঁশের ডুলির পরিবর্তে ট্রলিতে চেপে পাড়ি দেন বিসর্জনের পথে।কিন্তু রয়ে গেছে শতবর্ষের ঐতিহ্য।আমতা বাণী সংঘের এই পুজো গ্রামীণ হাওড়ার বহু অজানা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষীরূপে আজও বর্তমান।আজও মায়ের আবির্ভাবকে কেন্দ্র করে তিনদিনব্যাপী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দুঃস্থ পড়ুয়াদের সম্বর্ধনা,বস্ত্রবিতরণ,রক্তদান শিবির,বিনাব্যয়ে চিকিৎসা শিবিরের ন্যায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়।এভাবেই হাওড়া জেলা তথা রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন সার্বজনীন সরস্বতী পুজোর আবাহন থেকে বিসর্জনকে কেন্দ্র করে মেতে ওঠে আমতা শহর।

Comments

Popular posts from this blog

সবুজ সচেতনতায় অভিনব পদক্ষেপ শ্যামপুরের স্কুলে,পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হল বিশেষ পেন

নিজস্ব প্রতিনিধি: দূষণের ফলে একদিকে যেমন  গলছে বরফ,বাড়ছে তাপমাত্র,তেমনই রাজধানী দিল্লি ঢেকে যাচ্ছে কুয়াশায়।এই দানবীয় শক্তির মূলে কুঠারাঘাত হানতে না পারলে অনতিদূরেই অপেক্ষা করছে ঘোরতর বিপদ।আর এই দানবীয় শক্তিকে রোধ করতে প্রয়োজন সবুজের।সবুজ রোপণ ও তার সঠিক পরিচর্যার।আর সেই বার্তাই নব প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত করতে অভিনব উদ্যোগ নিল শ্যামপুর-২ ব্লকের নাওদা নয়নচন্দ্র বিদ্যাপীঠ।বিদ্যালয় কর্ত্তৃপক্ষের তরফে প্রায় ৩০০ পড়ুয়ার হাতে তুলে দেওয়া হল বিশেষ ধরনের পেন যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন গাছের বীজ।পেন ব্যবহারের পর তা ফেলে দিলে সেই বীজ মাটিতে পরে গাছ সৃষ্টি হবে বলে জানান বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুচন্দ্রিমা সেনগুপ্ত। তিনি আরও জানান,পেনগুলি তৈরি করেছে শ্যামপুরের 'আলোর দিশা' নামক একটি সংস্থা।বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ছাত্রছাত্রীদের হাতে পেন তুলে দেন স্থানীয় অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অমিত দাস।এর পাশাপাশি খুব শীঘ্রই স্থানীয় বাজারে কাগজের ঠোঙায় বীজ দিয়ে তা পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও বিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে।শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত এই অভিনব পদক্ষেপ

এক টুকরো শান্তির নীড়ে চলছে পাঠদান,সবুজের সমারোহে সেজে উঠেছে গ্রামীণ হাওড়ার নাওদা নয়নচন্দ্র বিদ্যাপীঠ

পৃথ্বীশরাজ কুন্তী: নীলসাদা বিল্ডিংগুলি যেন একটুকরো শান্তির নীড়,আর তার মধ্যে প্রাণের স্ফুরণ ঘটাচ্ছে নবপ্রজন্মের তরতাজা প্রাণগুলো।শিক্ষাঙ্গন হোক মুক্তাঙ্গন।শিক্ষার সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত স্বাস্থ্য।তাই শিক্ষাঙ্গনে স্বাস্থ্যকর সবুজ নির্মল পরিবেশ গড়ে তোলা আবশ্যক।আর সেই ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়েই বিদ্যালয়কে পড়ুয়াদের কাছে মুক্তাঙ্গন রূপে গড়ে তুলতে একগুচ্ছ অভিনব ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছে শ্যামপুর-২ ব্লকের নাওদা নয়নচন্দ্র বিদ্যাপীঠ। বিদ্যালয় চত্বরে প্রবেশ করার সময়ই অদ্ভুত সুন্দর ভালোলাগা তৈরি হয়ে যাবে বিদ্যালয়ের পারিপার্শ্বিক নীরব সবুজ পরিবেশে।মুহুর্তের মধ্যেই যে কেউ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রেমে পরবে তা নির্দ্বিধায় বলাই যায়।না শুধু বিদ্যালয় চত্বর জুড়ে অনন্যসুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলাই নয়,সমানতালে বিভিন্ন সৃজনশীল ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে বিদ্যালয় চত্বরজুড়ে।জল সংরক্ষণের ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়ে গড়ে উঠেছে বৃষ্টির জল পুনর্ব্যবহারের বিশেষ ব্যবস্থা।  পাশাপাশি,২-৩ ফুট গর্ত করে সেখানে সোকপিট করে তৈরি  হয়েছে ভৌমজল সঞ্চয়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা।পড়ুয়াদের

বন্যপ্রাণ রক্ষায় এগিয়ে এলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি

নিজস্ব প্রতিনিধি: সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বন্যপ্রাণ রক্ষায় রাজ্যের নানা প্রান্তে বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে।বন্যপ্রাণী সম্পর্কে মানুষও ক্রমে সচেতন হচ্ছেন।এবার বন্যপ্রাণ রক্ষায় সরাসরি এগিয়ে এলেন আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত কুমার পাল।জানা গেছে,আজ আমতা-২ ব্লকের নারিট থেকে কুশবেড়িয়ায় একটি কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার পথে নারিট-কুশবেড়িয়া রোডের তেগেছিয়ার কাছে রাস্তায় একটি পেঁচাকে পরে থাকতে দেখেন তিনি। পেঁচাটির শরীরে সামান্য আঘাতও ছিল।তৎক্ষনাৎ সুকান্ত বাবু নিজের গাড়িতে পেঁচাটিকে তুলে নেন।তিনি ও তাঁর সহযাত্রী অভিজিৎ প্রামাণিক পেঁচাটিকে দ্রুত উদ্ধার করে নিয়ে এসে বন দপ্তরের কর্মীদের হাতে তুলে দেন।সুকান্ত পাল বলেন,"বন্যপ্রাণ রক্ষা ও সংরক্ষণে সকলকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।সমাজের সর্বস্তরে গড়ে তুলতে হবে সচেতনতা।"