Skip to main content

এক টুকরো শান্তির নীড়ে চলছে পাঠদান,সবুজের সমারোহে সেজে উঠেছে গ্রামীণ হাওড়ার নাওদা নয়নচন্দ্র বিদ্যাপীঠ

পৃথ্বীশরাজ কুন্তী: নীলসাদা বিল্ডিংগুলি যেন একটুকরো শান্তির নীড়,আর তার মধ্যে প্রাণের স্ফুরণ ঘটাচ্ছে নবপ্রজন্মের তরতাজা প্রাণগুলো।শিক্ষাঙ্গন হোক মুক্তাঙ্গন।শিক্ষার সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত স্বাস্থ্য।তাই শিক্ষাঙ্গনে স্বাস্থ্যকর সবুজ নির্মল পরিবেশ গড়ে তোলা আবশ্যক।আর সেই ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়েই বিদ্যালয়কে পড়ুয়াদের কাছে মুক্তাঙ্গন রূপে গড়ে তুলতে একগুচ্ছ অভিনব ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছে শ্যামপুর-২ ব্লকের নাওদা নয়নচন্দ্র বিদ্যাপীঠ।





বিদ্যালয় চত্বরে প্রবেশ করার সময়ই অদ্ভুত সুন্দর ভালোলাগা তৈরি হয়ে যাবে বিদ্যালয়ের পারিপার্শ্বিক নীরব সবুজ পরিবেশে।মুহুর্তের মধ্যেই যে কেউ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রেমে পরবে তা নির্দ্বিধায় বলাই যায়।না শুধু বিদ্যালয় চত্বর জুড়ে অনন্যসুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলাই নয়,সমানতালে বিভিন্ন সৃজনশীল ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে বিদ্যালয় চত্বরজুড়ে।জল সংরক্ষণের ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়ে গড়ে উঠেছে বৃষ্টির জল পুনর্ব্যবহারের বিশেষ ব্যবস্থা। 






পাশাপাশি,২-৩ ফুট গর্ত করে সেখানে সোকপিট করে তৈরি  হয়েছে ভৌমজল সঞ্চয়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা।পড়ুয়াদের জল সচেতনতা সম্পর্কে শুভবার্তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই এহেন উদ্যোগ বলে জানান বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষিকা সুচন্দ্রিমা সেনগুপ্ত।একাদশ শ্রেণীর পড়ুয়ারাই নিজেহাতে সমস্ত কাজকর্ম করেছে বলে সুচন্দ্রিমাদেবী জানান।বিদ্যালয় চত্বরের মধ্যেই খনন করা হয়েছে ৪ ফুট গভীরতার ছোটো কৃত্রিম পুকুর।অর্ক,সচেতন,টিঙ্করের মতো ছাত্ররা সে পুকুরে ছেড়েছে ব্যাঙাচি,ছোটো মাছ।মূলত,পুকুরের বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের হাতেকলমে পাঠ দিতেই এই অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।এরসাথে প্লাস্টিকের পুর্নব্যবহার সম্পর্কে পড়ুয়াদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে বাড়িতে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বোতল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ব্রিকস।তারমধ্যে গাছ বসিয়ে বিদ্যালয় চত্বরে সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে বলে জানান বিদ্যালয়ের শিক্ষক অমিয় সরকার।বিদ্যালয় জুড়ে সারি দিয়ে শোভাবর্ধন করছে কয়েকশো টবে থাকা বিভিন্ন গাছ।




কিচেন গার্ডেনে চাষ হচ্ছে বেগুন,শাক,ঢ্যাঁড়স,লঙ্কাসহ বিভিন্ন সব্জি।সেইসমস্ত তাজা সব্জি মিড-ডে-মিলের রান্না কাজে ব্যবহৃত হয়।স্কুলের দেওয়াল জুড়ে বিভিন্ন সামাজিক বার্তা কিমবা কোথাও মনীষীর ছবি আবার কোথাও বা ভারতমাতার বীর যোদ্ধাদের বীরত্বের চিত্র,আবার বা সিঁড়িজুড়ে স্থান পেয়েছে জীবনে সাফল্যের পথে এগিয়ে চলার প্রেরণামূলক বার্তা।ক্যাম্পাস জুড়ে রয়েছে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা।পড়ুয়াদেরও নিয়মিত ডিজাস্টার প্রিপেয়ার্ডনেস সম্পর্কে সচেতন করা হয়।







শুধু বিদ্যালয় চত্বরকে সাজিয়ে তোলাই নয়,পড়াশোনার সার্বিক মানোন্নয়ন,সুস্বাস্থ্য গড়ে তোলা,ছাত্রীদের আত্মরক্ষার পাঠ প্রদানের মতো বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে গ্রামীণ হাওড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।পড়ুয়ারা যাতে অভাব-অভিযোগ,সমস্যার কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারে তার জন্য রয়েছে 'মনের কথা' নামক বিশেষ বাক্স।বাক্সে পড়ুয়ারা নিজেদের কথা লিখিত ভাবে জমা দেয়।বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুপ্রীতি দাসের তত্ত্বাবধানে 'বিশাখা কমিটি' পড়ুয়াদের অভাব অভিযোগ,সমস্যা খতিয়ে দেখে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে।




এর পাশাপাশি অবস্থান করছে গল্প,রেফারেন্স,ক্যুইজ,জীবনীগ্রন্থে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার।সাথী সানা,সাথী বেরার মতো পড়ুয়ারাই দায়িত্ব নিয়ে গ্রন্থাগারকে সাজিয়ে তুলেছে।বিদ্যালয়ে রয়েছে স্থায়ী প্রদর্শনীকক্ষ।





পড়ুয়ারা নিজেরা মাঝেমধ্যেই নিজেদের হাতে তৈরি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীকক্ষে জমা দেয়।নিয়মিত কয়েকশো ছাত্রীকে আত্মরক্ষার জন্য ক্যারাটের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।আবার,ছাত্রদের জন্য ব্যান্ড ও যোগব্যায়ামের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলে জানান শিক্ষিকা মৌমিতা চ্যাটার্জী।বিদ্যালয়ে নিয়মিত প্রকাশিত হয় ক্রীড়া পত্রিকা।বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরুণাভ বাজানির কথায়,বিদ্যালয় মানে কেবল পুঁথিগত শিক্ষাপ্রদান নয়,একটি পরিপূর্ণ মানুষ গড়ার পীঠস্থান।তাই বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি পড়ুয়াদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিকাশের লক্ষ্যে জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রেরণাতে তাঁরা এহেন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।বিদ্যালয়ের এই ধরনের বহুমুখী কার্যক্রমে মুগ্ধ হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় মানুষ থেকে প্রাক্তনীরা।সকলের সহযোগিতাকে পাথেয় করে মূলত একাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী,শিশু সংসদের সদস্য ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এধরনের ভাবনাকে রূপায়িত করা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান।







শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার।আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের বহু পড়ুয়া ইতিমধ্যেই নাওদা গ্রামের এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে শুরু করেছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।এহেন কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এবছরই মিলেছে 'নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার'।শিশুমিত্রের দৌড়ে থাকা এই বিদ্যালয়ে সম্প্রতি রাজ্যস্তরের প্রতিনিধিরা পরিদর্শনে আসেন।



শিশু সংসদের প্রধানমন্ত্রী অঙ্কিতা দাসের কথায়,এই ধরনের প্রাঞ্জল পরিবেশ তাদের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।স্থানীয় অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অমিত দাস বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পড়ুয়াদের উদ্যোমী মানসিকতার ভূয়সী প্রশংসা করেন।পড়ুয়া থেকে শিক্ষকমহল,অভিভাবক,স্থানীয়দের একটাই প্রত্যাশা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এভাবেই রাজ্যের দ্বারে এক মডেল স্কুল হিসাবে গড়ে উঠুক নাওদা নয়নচন্দ্র বিদ্যাপীঠ।



Comments

  1. I'm happy for being a part of this institution. I watch all of this every day and and feel mesmerized.

    ReplyDelete
  2. That's an ideal profile of an ideal educational institution with versatile opportunities opened for the learners enhancing the Nirmal Vidyalaya Parish. That's a good and honest attempt by the administrative body of the school only for the sake of the students.They
    deserve to be praised. I am really proud to be an active supporter being a teacher of that neighbouring school.

    ReplyDelete
  3. very good.we the people of Howrah Jogesh Chandra Girls' are also trying to create an environment friendly atmosphere in our school

    ReplyDelete
  4. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  5. Its ammazing to see this.This extraordinary step will be pioneer for every institute..

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

সবুজ সচেতনতায় অভিনব পদক্ষেপ শ্যামপুরের স্কুলে,পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হল বিশেষ পেন

নিজস্ব প্রতিনিধি: দূষণের ফলে একদিকে যেমন  গলছে বরফ,বাড়ছে তাপমাত্র,তেমনই রাজধানী দিল্লি ঢেকে যাচ্ছে কুয়াশায়।এই দানবীয় শক্তির মূলে কুঠারাঘাত হানতে না পারলে অনতিদূরেই অপেক্ষা করছে ঘোরতর বিপদ।আর এই দানবীয় শক্তিকে রোধ করতে প্রয়োজন সবুজের।সবুজ রোপণ ও তার সঠিক পরিচর্যার।আর সেই বার্তাই নব প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত করতে অভিনব উদ্যোগ নিল শ্যামপুর-২ ব্লকের নাওদা নয়নচন্দ্র বিদ্যাপীঠ।বিদ্যালয় কর্ত্তৃপক্ষের তরফে প্রায় ৩০০ পড়ুয়ার হাতে তুলে দেওয়া হল বিশেষ ধরনের পেন যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন গাছের বীজ।পেন ব্যবহারের পর তা ফেলে দিলে সেই বীজ মাটিতে পরে গাছ সৃষ্টি হবে বলে জানান বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুচন্দ্রিমা সেনগুপ্ত। তিনি আরও জানান,পেনগুলি তৈরি করেছে শ্যামপুরের 'আলোর দিশা' নামক একটি সংস্থা।বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ছাত্রছাত্রীদের হাতে পেন তুলে দেন স্থানীয় অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অমিত দাস।এর পাশাপাশি খুব শীঘ্রই স্থানীয় বাজারে কাগজের ঠোঙায় বীজ দিয়ে তা পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও বিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে।শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত এই অভিনব পদক্ষেপ

বন্যপ্রাণ রক্ষায় এগিয়ে এলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি

নিজস্ব প্রতিনিধি: সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বন্যপ্রাণ রক্ষায় রাজ্যের নানা প্রান্তে বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে।বন্যপ্রাণী সম্পর্কে মানুষও ক্রমে সচেতন হচ্ছেন।এবার বন্যপ্রাণ রক্ষায় সরাসরি এগিয়ে এলেন আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত কুমার পাল।জানা গেছে,আজ আমতা-২ ব্লকের নারিট থেকে কুশবেড়িয়ায় একটি কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার পথে নারিট-কুশবেড়িয়া রোডের তেগেছিয়ার কাছে রাস্তায় একটি পেঁচাকে পরে থাকতে দেখেন তিনি। পেঁচাটির শরীরে সামান্য আঘাতও ছিল।তৎক্ষনাৎ সুকান্ত বাবু নিজের গাড়িতে পেঁচাটিকে তুলে নেন।তিনি ও তাঁর সহযাত্রী অভিজিৎ প্রামাণিক পেঁচাটিকে দ্রুত উদ্ধার করে নিয়ে এসে বন দপ্তরের কর্মীদের হাতে তুলে দেন।সুকান্ত পাল বলেন,"বন্যপ্রাণ রক্ষা ও সংরক্ষণে সকলকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।সমাজের সর্বস্তরে গড়ে তুলতে হবে সচেতনতা।"