Skip to main content

জেলার সেরা হিসাবে 'শিশুমিত্র' পুরস্কার পাচ্ছে আমতার বিদ্যালয়


নিজস্ব প্রতিনিধি: বছর দু'য়েক আগের রুক্ষ্মশুষ্ক মরু প্রান্তর আজ যেন এক টুকরো প্রাঞ্জল ভূমি।নীল-সাদা দেওয়াল জুড়ে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বোতলের মধ্যে সবুজের সমাহার।বিদ্যালয় চত্বরের বিভিন্ন জায়গায় রাখা রয়েছে বায়ো-ডাস্টবিন।দেওয়াল জুড়ে রংবেরঙের বিভিন্ন চিত্র,কোথাও আঁকা দুই বন্ধুর সৌহার্দ্যের ছবি;আবার কোথাও বা তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন শাকসব্জির উপকারিতার কথা।চলছে স্মার্টক্লাস।স্ক্রিনের দিকে একমনে তাকিয়ে খুদেরা।বিরতিতে মেঝেতে আঁকা লুডোয় বা দাবার ঘরে চাল দিতে ব্যস্ত খুদেরা।না,একোনো শহরের প্রসিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়;গ্রামীণ হাওড়ার আমতা-১ ব্লকের সোনামুই হরিসভা প্রাথমিক বিদ্যালয়।

পরিষ্কার,সুস্বাস্থ্যকর পরিবেশসম্পন্ন বিদ্যালয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ এবছরই মিলেছিল 'নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার'।এবার জেলার সেরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিরোপা রূপে সোনামুই হরিসভা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মুকুটে জুড়তে চলেছে আরেক নতুন পালক।আগামী ১৩ ই ডিসেম্বর রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে কোলকাতার রবীন্দ্র সদনে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে এই বিদ্যালয়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে 'শিশুমিত্র পুরস্কার-২০১৯'।


বিদ্যালয়ের ছাদে কিচেন গার্ডেন,বৃষ্টির জল সংরক্ষণে বিশেষ ব্যবস্থা,শিক্ষার্থীসংখ্যা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের জন্মদিন পালনের মতো বিভিন্ন প্রশংসনীয় উদ্যোগ আগেই নিয়েছিল সিরাজবাটি চক্রের আওতাধীন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।পড়ুয়াদের মধ্যে বই পড়ার নেশা তৈরি করতে বিদ্যালয়ে গড়ে উঠেছে 'সহজ পাঠ' নামক গ্রন্থাগার।গ্রন্থাগারে গল্প,ক্যুইজ,ছড়া,বিজ্ঞানের বই ছাড়াও প্রতিদিন বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র পাঠ করে পড়ুয়ারা।অন্যদিকে, হাতেকলমে বিজ্ঞানের পাঠ দিতে মাইক্রোস্কোপ,আণুবীক্ষণিক জীবের স্লাইড সহ বিভিন্ন বিজ্ঞান মডেলে সেজে উঠেছে ছোট্ট ল্যাবরেটরি।আবার ছাদে ভেষজ উদ্যানে টবে চাষ হচ্ছে পুদিনা,তুলসি,কুলেখাড়া,ব্রাহ্মী,কালমেঘের মতো বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ।পাশেই লেখা রয়েছে সংশ্লিষ্ট উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম ও তার গুণাবলী।বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বনশ্রী ভৌমিক জানান,নিয়মিত অঙ্কন,নৃত্য,আবৃত্তির বিশেষ পাঠ দেওয়া হয় পড়ুয়াদের।

বিদ্যালয়ের এইধরনের বিভিন্ন কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে শিশু সংসদের মন্ত্রী ও তাদের পারিষদরা।শিপ্রা,সূর্য,শুভশ্রীর মতো খুদে সদস্যরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে নিয়ম করে টিফিনে বেড়িয়ে পড়ে গ্রামের বিভিন্ন পাড়ায় পাড়ায়।কখনো স্থানীয় বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বৃক্ষরোপণ করা,কখনো বা তার পরিচর্যা,আবার বা ডেঙ্গু সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা কিমবা বিভিন্ন বাড়ি থেকে ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল ও পলিথিন সংগ্রহ করে আনে তারা।শিশু সংসদের প্রধানমন্ত্রী শিপ্রা পাত্রের কথায়,'বিশ্বউষ্ণায়নের হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে আমাদের মতো ছাত্রসমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে'।

বিভিন্ন বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা বোতলে পলিথিন ভরে প্রধান শিক্ষক অরুণ খাঁ তৈরি করেছেন বিশেষ ব্রিকস।তা দিয়েই তিনি বানিয়ে ফেলেছেন বিশেষ টেবিল যা ছাত্রছাত্রীদের মিড-ডে-মিল খাবার টেবিল হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।প্রধান শিক্ষক অরুণ খাঁ জানান,শিশুদের মানবিক ও শারীরিক বিকাশের স্বার্থে প্রয়োজন একটি সুস্থ-সুনির্মল পরিবেশের।তার সাথে সাথে তাদের মধ্যে সুস্থ সংস্কৃতিবোধ গড়ে ওঠা আবশ্যক।সেই লক্ষ্যেই তাঁদের এই প্রয়াস।তিনি আরও জানান,বিদ্যালয়ের এইসমস্ত কর্মকাণ্ডের জেরে প্রতি বছর পড়ুয়ার সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।২০১৭ সালে যেখানে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল মাত্র ২৩ জন।২০১৮-তে তা বেড়ে হয়েছে ৩৯ এবং ২০১৯ সালে পড়ুয়া সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪।বিদ্যালয় চত্বর জুড়ে বৃক্ষরোপণ,পানীয় জল অপচয় সম্পর্কে বিশেষ বার্তাবাহী ফ্লেক্স যেমন লাগানো হয়েছে তার পাশাপাশি আমতা ও সোনামুইয়ের বিভিন্ন প্রসিদ্ধ স্থান ও ইতিহাসকে ফ্লেক্সের মাধ্যমে দেওয়ালে তুলে ধরা হয়েছে।

মমতা পাঁজা,তরুণ পাছাল,সৌরভ পালের মতো অভিভাবিক-অভিভাবিকাদের কথায়,এই ধরনের সুন্দর পরিবেশ ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পড়ুয়াদের এই উদ্যোমী মানসিকতার ভূয়সী প্রশংসা করেন স্থানীয় অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক দীপঙ্কর কোলে।পড়ুয়া-শিক্ষকমহল,অভিভাবক,স্থানীয়দের একটাই প্রত্যাশা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এভাবেই রাজ্যের দ্বারে এক মডেল স্কুল হিসাবে গড়ে উঠুক সোনামুই গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

Comments

Popular posts from this blog

সবুজ সচেতনতায় অভিনব পদক্ষেপ শ্যামপুরের স্কুলে,পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হল বিশেষ পেন

নিজস্ব প্রতিনিধি: দূষণের ফলে একদিকে যেমন  গলছে বরফ,বাড়ছে তাপমাত্র,তেমনই রাজধানী দিল্লি ঢেকে যাচ্ছে কুয়াশায়।এই দানবীয় শক্তির মূলে কুঠারাঘাত হানতে না পারলে অনতিদূরেই অপেক্ষা করছে ঘোরতর বিপদ।আর এই দানবীয় শক্তিকে রোধ করতে প্রয়োজন সবুজের।সবুজ রোপণ ও তার সঠিক পরিচর্যার।আর সেই বার্তাই নব প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত করতে অভিনব উদ্যোগ নিল শ্যামপুর-২ ব্লকের নাওদা নয়নচন্দ্র বিদ্যাপীঠ।বিদ্যালয় কর্ত্তৃপক্ষের তরফে প্রায় ৩০০ পড়ুয়ার হাতে তুলে দেওয়া হল বিশেষ ধরনের পেন যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন গাছের বীজ।পেন ব্যবহারের পর তা ফেলে দিলে সেই বীজ মাটিতে পরে গাছ সৃষ্টি হবে বলে জানান বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুচন্দ্রিমা সেনগুপ্ত। তিনি আরও জানান,পেনগুলি তৈরি করেছে শ্যামপুরের 'আলোর দিশা' নামক একটি সংস্থা।বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ছাত্রছাত্রীদের হাতে পেন তুলে দেন স্থানীয় অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অমিত দাস।এর পাশাপাশি খুব শীঘ্রই স্থানীয় বাজারে কাগজের ঠোঙায় বীজ দিয়ে তা পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও বিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে।শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত এই অভিনব পদক্ষেপ

এক টুকরো শান্তির নীড়ে চলছে পাঠদান,সবুজের সমারোহে সেজে উঠেছে গ্রামীণ হাওড়ার নাওদা নয়নচন্দ্র বিদ্যাপীঠ

পৃথ্বীশরাজ কুন্তী: নীলসাদা বিল্ডিংগুলি যেন একটুকরো শান্তির নীড়,আর তার মধ্যে প্রাণের স্ফুরণ ঘটাচ্ছে নবপ্রজন্মের তরতাজা প্রাণগুলো।শিক্ষাঙ্গন হোক মুক্তাঙ্গন।শিক্ষার সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত স্বাস্থ্য।তাই শিক্ষাঙ্গনে স্বাস্থ্যকর সবুজ নির্মল পরিবেশ গড়ে তোলা আবশ্যক।আর সেই ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়েই বিদ্যালয়কে পড়ুয়াদের কাছে মুক্তাঙ্গন রূপে গড়ে তুলতে একগুচ্ছ অভিনব ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছে শ্যামপুর-২ ব্লকের নাওদা নয়নচন্দ্র বিদ্যাপীঠ। বিদ্যালয় চত্বরে প্রবেশ করার সময়ই অদ্ভুত সুন্দর ভালোলাগা তৈরি হয়ে যাবে বিদ্যালয়ের পারিপার্শ্বিক নীরব সবুজ পরিবেশে।মুহুর্তের মধ্যেই যে কেউ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রেমে পরবে তা নির্দ্বিধায় বলাই যায়।না শুধু বিদ্যালয় চত্বর জুড়ে অনন্যসুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলাই নয়,সমানতালে বিভিন্ন সৃজনশীল ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে বিদ্যালয় চত্বরজুড়ে।জল সংরক্ষণের ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়ে গড়ে উঠেছে বৃষ্টির জল পুনর্ব্যবহারের বিশেষ ব্যবস্থা।  পাশাপাশি,২-৩ ফুট গর্ত করে সেখানে সোকপিট করে তৈরি  হয়েছে ভৌমজল সঞ্চয়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা।পড়ুয়াদের

বন্যপ্রাণ রক্ষায় এগিয়ে এলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি

নিজস্ব প্রতিনিধি: সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বন্যপ্রাণ রক্ষায় রাজ্যের নানা প্রান্তে বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে।বন্যপ্রাণী সম্পর্কে মানুষও ক্রমে সচেতন হচ্ছেন।এবার বন্যপ্রাণ রক্ষায় সরাসরি এগিয়ে এলেন আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত কুমার পাল।জানা গেছে,আজ আমতা-২ ব্লকের নারিট থেকে কুশবেড়িয়ায় একটি কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার পথে নারিট-কুশবেড়িয়া রোডের তেগেছিয়ার কাছে রাস্তায় একটি পেঁচাকে পরে থাকতে দেখেন তিনি। পেঁচাটির শরীরে সামান্য আঘাতও ছিল।তৎক্ষনাৎ সুকান্ত বাবু নিজের গাড়িতে পেঁচাটিকে তুলে নেন।তিনি ও তাঁর সহযাত্রী অভিজিৎ প্রামাণিক পেঁচাটিকে দ্রুত উদ্ধার করে নিয়ে এসে বন দপ্তরের কর্মীদের হাতে তুলে দেন।সুকান্ত পাল বলেন,"বন্যপ্রাণ রক্ষা ও সংরক্ষণে সকলকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।সমাজের সর্বস্তরে গড়ে তুলতে হবে সচেতনতা।"