নিজস্ব প্রতিনিধি: অর্ঘ্য,রহমত,সুচিত্রা,শ্যামলরা অন্য পাঁচটা দিনের মতো রবিবারের সকালেও পলিথিন হাতে বাজারে হাজির হলেও আজ আর পলিথিন নয়,কাপড়ের ব্যাগে সব্জি নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।সকাল সকাল আমতা-১ ব্লকের উদং তরুণ সংঘের মাঠে বসা বাজারে উপস্থিত হয়ে বাবা-মা'র হাত ধরে বড়োদের হাতে তুলে দিল ছোট্ট রিয়ান্সি।রিয়ান্সিকে নিয়ে তিন বছরের জন্মদিনের সকালটা এভাবেই কাটালেন তার বাবা-মা।মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিলেন পরিবেশ সচেতনতা ও প্লাস্টিকের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারের শুভবার্তা।রিয়ান্সির জন্মদিনকে একটু অন্যভাবে পালন করতে এগিয়ে এসেছে গ্রামীণ হাওড়ার অন্যতম সমাজসেবামূলক সংগঠন 'স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ'।মূলত,এই সংস্থার ভাবনায় ও ব্যবস্থাপনায় এই আয়োজন বলে জানান রিয়ান্সির বাবা পেশায় শিক্ষক রাকেশ মন্ডল।রাকেশ বাবু জানান,প্রায় ৫০০ মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে পরিবেশবান্ধব এই ব্যাগ।রবিবারের সকাল মানেই উদংয়ের এই বাজারে বহু মানুষের ভিড়।ঘড়ির কাঁটায় ৭ টা বাজার সাথে সাথেই রিয়ান্সি বাবা-মা,'স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ'-এর সদস্যদের সাথে উপস্থিত হয়ে যায় বাজারে।বেশ কয়েকটি ব্যাগ নিজে হাতে তুলে দেওয়ার পর ওই সংস্থার সদস্যরা মানুষের মধ্যে কাপড়ের ব্যাগ বিলি করেন।
বিক্রেতাদের কাছে পলিথিন ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করা হয়।এর পাশাপাশি ক্রেতাদের কাছেও অনুরোধ করা হয় কাপড় ও পরিবেশবান্ধব সামগ্রী দিয়ে তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করা ও বিক্রেতাদের থেকে পলিথিন না নেওয়ার জন্য।বাজারে উপস্থিত ক্রেতা বিশ্বনাথ পালের কথায়,'এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ভাবার সময় এসেছে'।আবার ব্যবসায়ী অনয় খাঁ জানালেন,তিনি খদ্দেরদের কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে আসতে বলবেন এবার থেকে।'রিয়ান্সির জন্মদিনে হোক বাজার বদল' নামক এই কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে মানুষের কাছে প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের কুফল,প্লাস্টিকের পুর্নব্যবহার এবং সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিলেন আমতা-১ ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক মাননীয় লোকনাথ সরকার মহোদয়,উদং-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জয়ন্তী দাস,বিশিষ্ট পরিবেশবিদ সৌরভ দোয়ারী,বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ কুন্তল অধিকারী প্রমুখ।
পাশাপাশি,উদং তরুণ সংঘের সম্পাদক অলোক ভুঁইয়া এই কর্মসূচি থেকে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ প্লাস্টিকমুক্ত উদং বাজার (হাট) গড়ার ডাক দেন।
'স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ'-এর কর্তা মানস পাল জানান,তাঁদের সংস্থা মূলত শিক্ষায় স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে গ্রামীণ হাওড়ার আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল পড়ুয়াদের নিয়ে কাজ করলেও পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সম্পর্কেও সচেতন।মানুষকে প্লাস্টিক ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে,তুলে ধরতে হবে ব্যবহারের সুদূরপ্রসারী কুফল সেই লক্ষ্যেই এই ধরনের অভিনব কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন তাঁরা।প্রত্যেকটি ব্যাগের জন্য ১৫ টাকা করে খরচ হয়েছে বলেও তিনি জানান।এহেন অভিনব উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে বিশিষ্ট পরিবেশকর্মী সৌরভ দোয়ারী জানান,প্লাস্টিকের পুর্নব্যবহার সম্পর্কে আমাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে।চেষ্টা করতে হবে যতটা কম পলিথিন ব্যবহার করা যায়।কেবলমাত্র এই উদ্যোগেই থেমে থাকেননি রিয়ান্সির বাবা-মা।সকালে এই কর্মসূচির পর দুপুরেও এই সংস্থার সদস্য-সদস্যাদের নিয়ে তাঁরা পৌঁছে যান বাগনান-২ ব্লকের বেনাপুরের এক ইটভাটায়।
রূপনারায়ণের তীরে বসবাসকারী ইটভাটায় কর্মরত ৩০ টি প্রত্যন্ত শ্রমিক পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় কম্বল।রিয়ান্সির মা পেশায় খিলা গোপীমোহন শিক্ষাসদনের শিক্ষিকা মল্লিকা আচার মন্ডল বলেন,সমাজের পাশে থাকার পাশাপাশি ছোটো থেকেই মেয়ের মধ্যে সামাজিক ও মানবিক চেতনা গড়ে তোলার লক্ষ্যেই তাঁদের এহেন পদক্ষেপ।তাই ছোট্ট রিয়ান্সি নিজের জন্মদিনে একাধারে পরিবেশ রক্ষা ও অন্যদিকে সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শুভবার্তা দিয়ে গেল সমাজের উদ্দেশ্যে।
Comments
Post a Comment